প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সীমান্ত কন্যা গারো পাহাড়ের সুষমামন্ডিত শেরপুর একটি অতি প্রাচীন জনপদ। দেশের ছোট্ট সুন্দর প্রান্তিক জেলা শেরপুর। অতি প্রাচীনকালে শেরপুর কামরূপ রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামলে বিশাল চওড়া ও খরস্রোতা ব্রহ্মপুত্র পার হয়ে শেরপুর পৌঁছতে সময় লাগত এক প্রহর বা তিন ঘন্টারও বেশী। এই পারের পারানি ছিল দশকাহন কড়ি বা সুলতানী দশ টাকা। তাই এ অঞ্চলকে তখন বলা হতো ‘দশকাহনিয়া বাজু’(বিভাগ)। সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ভাওয়ালের গাজীগণ ঈশা খাঁর বংশধরদের কাছ থেকে দশকাহনিয়া পরগণা দখল করে নেয়। গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজীর নামানুসারে দশকাহনিয়ার নামকরণ করা হয় - শেরপুর। ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইক্তার উদ্দিন উজবেগ তুগ্রলখা, ১৪৯১ খ্রিস্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় ফিরোজ শাহ, ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে হুসেন শাহ, পরবর্তীতে পাঠান সম্রাট শেরশাহ, মোগল সম্রাট বাবর, হুমায়ুন, আকবর- এমনি আরও অনেক রাজা-বাদশাহগণ এ অঞ্চল শাসন করতেন।
প্রাচীনকালে শাসন ব্যবস্থা বলতে মুলতঃ ভূমি বন্দোবস্ত প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়করণকেই বুঝাত। বিচার-আচারের ক্ষমতা ছিল- গ্রাম্যসমিতি, গ্রাম্য মন্ডল ও জমিদারগণের উপর। জমিদারগণ প্রজা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তালুকদারদের বিচার করতেন এবং দস্যু ও তস্করের শাস্তি প্রদান করতেন। জমিদারগণের বিচারের উপর দেওয়ানী আদালত ছিল।
১৭৫৭ সালের শেষভাগে ইংরেজরা ঢাকা অধিকার করেন। ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে গভর্ণর ওয়ারেন হেষ্টিংস্ এদেশের কর সংগ্রহ ও ভূমি বন্দোবস্তের এবং বিচার ব্যবস্থার জন্য ‘কালেক্টর’ পদ ও দেওয়ানী আদালতের সৃষ্টি করেন। ১৭৮৭ সনের ১লা মে ময়মনসিংহ জেলা স্থাপিত হয়। মিঃ রটন ময়মনসিংহের প্রথম কালেক্টর হিসাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি জজ, ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর - এই তিন পদেরই ক্ষমতা পেয়েছিলেন।
১৮০৭ সনে শেরপুরের পাহাড় অঞ্চলে বন্য অধিবাসীদের মধ্যে অরাজকতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শাসন ব্যবস্থা সুশৃংখলভাবে পরিচালনার জন্য শেরপুরের অন্তর্গত কালীগঞ্জ নামক স্থানে জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় স্থাপিত হয়। মিঃ মেকসুল কালীগঞ্জের প্রথম জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত হন। উক্ত জয়েট ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অল্পকাল পরই উঠিয়ে নেয়া হয়।
১৮২৮ সনে পুনরায় শেরপুরে জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় স্থাপিত হয়। ১৮৩২ সনে শেরপুরের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছারী উঠিয়ে নেয়া হয়।
উনবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই শেরপুরে থানা ও ফৌজদারী কোর্ট স্থাপিত হয়। ১৮৪৫ সনে শেরপুর , হাজীপুর ও পিংনা এই ০৩(তিন) থানা নিয়ে জামালপুর মহকুমা স্থাপিত হয়। ময়মনসিংহের জয়েন্ট ম্যাজিস্ট্রেট জামালপুর মহকুমার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। শেরপুর দীর্ঘদিন জামালপুর মহকুমার অধীন ছিল।
১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দের ৮ই জানুয়ারি শেরপুর থানা থেকে মহকুমায় এবং ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২২ শে ফেব্রুয়ারি জেলায় উন্নীত হয়। ১৩৬৩.৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনবিশিষ্ট এ জেলা শেরপুর সদর, নকলা , নালিতাবাড়ী , ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী - এই ৫ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত । এ জেলায় বর্তমানে ৪ টি পৌরসভা ও ৫২ টি ইউনিয়ন আছে। লোকসংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস