পৌরসভার সংক্ষিপ্ত বিবরণ
ইংরেজ আমলের প্রথম থেকেই শেরপুর শহর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার প্রধান প্রধান শহরগুলের অন্যতম ছিল। ১৮৭২ সনের জানুয়ারী মাসের প্রথমবারের মত ময়মনসিংহ জেলার লোক গণনা করা হয়। এই আদমশুমারী অনুয়াযী মাত্র পাঁচটি শহরে পাঁচ হাজার বা ততোধিক লোক সংখ্যা ছিল। যথাক্রমে (১) ময়মনসিংহ বা নাছিরাবাদ ১০,০৬৮, (২) জামালপুর ১৪,৩১২, (৩) কিশোরগঞ্জ ১৩,৩৬৭, (৪) ধানীখোলা ৬,৭৩০, (৫) শেরপুর ৮,০১৪। শেরপুরের লোকসংখ্যার মধ্যে ৪,২৯৭ জন মুসলমান ও ৩,৭১৮ জন হিন্দু ছিল। ইংরেজ সরকার শেরপুর শহরটির উন্নতিকল্পে ও শহরবাসীর শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যাতায়াত সুবিধার জন্য আদমশুমারীর কয়েক বছর পূর্বে অর্থাৎ ১৮৬৯ সালের ১লা এপ্রিল তারিখে শেরপুর পৌরসভার পত্তন করেন।
শহরটির আয়তন সম্পর্কে হরচন্দ্র চৌধুরী ১৮৭২ সনে প্রকাশিত তার ‘‘সেরপুর বিবরণী’’ গ্রন্থে লিখেছেন ১২ বর্গমাইল। সেই বছরেই ১৫ জানুয়ারী রাতের আদমশুমারীতে অধিবাসীর সংখ্যা ছিল ৭,৯৯১ জন। তন্মেধ্যে পুরুষ ৩,০৮৬ জন্য, স্ত্রী ২,৮১৮ জন, বালক ১,১৩৯ জন ও বালিকা ৯৪১ জন। লোকসংখ্যার অর্ধেক ছিল মুসলিম এবং বাকী অর্ধেক হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী। মিউনিসিপ্যাল বার্ষিক ট্যাক্স ছিল মাত্র ৩,০০০/- টাকা। শহরের শান্তি রক্ষার জন্য ১জন হেড কনষ্টেবল ও ১০ জন কনেস্টবল ছিল। শহরের সীমা ছিল উত্তরে মনকান্দা, দক্ষিণে সেরী, পূর্বে পাকুড়িয়া ও পশ্চিমে মৃগি নদী।
১৯৬৯ সনে প্রকাশিত অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেনের ‘‘সেরপুরের ইতিকথা’’ গ্রন্থে শেরপুরশহরের আয়তন ৯.১/২ বর্গমাইল বলে উল্লেখ করেছেন। এই শহরের লোকসংখ্যা সম্পর্কে যদ্দুর জানা যায় ১৯১১ সনে ছিল ১৫,৫৯১ জন, ১৯২১ সনে হয় ১৭,৮১৩ জন এবং ১৯৬৯ সনে এসে দাড়ায় ২৪,৯২৪ জন। তন্মধ্যে ১৩,১১৩ জন পুরুষ, ১১,৮১১ জন স্ত্রী এবং ১৯,২৮৯ জন মুসলমান, ৪,২৫৮ জন হিন্দু, ১,২৮৫ জন্য নীচু জাতের হিন্দু, ৯১ জন গারো ও খ্রিষ্টান এবং ৪ জন্য অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ছিল। ‘‘শেরপুর জেলা শুভ উদ্বোধন’’ নামে এক স্মরণিকায় ২২ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সনে শেরপুর শহরের লোকসংখ্যা বলা হয়েছে ৫১,৮৫৪ জন।
শেরপুর শহরের উন্নয়নকল্পে যে মিউনিসিপ্যালিটির পত্তন হয় উহাতে ১৮৮৬ সন পর্যন্ত গভর্ণমেন্টের মনোনীত ও নির্বাচিত মেম্বারদের মধ্যে মাত্র ভাইস চেয়ারম্যান নিযুক্ত হতো। তদানীন্তন জামালপুর সাব-ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত অফিসার শেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান থাকতেন। শেরপুর পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন টি,এ,ডনো (১৮৬৯-১৮৭৪)। ১৩৩৬বাংলাসালে প্রকাশিত বিজয় চন্দ্র নাগের ‘‘নাগবংশের ইতিহাস’’ গ্রন্থে বলাহয়েছে ‘‘মিউনিসিপ্যালিটির জরাজীর্ণ টিনের অফিস কার্যালয়টি অপসারিত হইয়া বর্তমানে ঐ স্থানে দালান নির্মান আরম্ভ হইয়াছে। এই অফিস ভবন নির্মাণ বাবদ গভর্ণমেন্টের নিকট হতে ৫,০০০/- টাকা অনুদান পাওয়া যায় এবং বাকী ৫,০০০/- টাকা তৎকালীন চেয়ারম্যান শ্রীযুক্ত হেমন্ত চন্দ্র চৌধুরী (১৯২৭ সন হতে) মহাশয় স্বীয় পিতৃদেব স্বর্গীয় রায়বাহাদুর চারু চন্দ্র চৌধুরী মহাশয়ের স্মৃতিকল্পে মিউনিসিপ্যালিটিকে দান করিয়াছেন। এই অফিস ভবন নির্মাণ কার্য্য শেষ হইলে উহা ‘‘চারু ভবন’’ নামে অভিহিত হবে। পরবর্তীতে ‘চারুভবন’ নামকরন করা হয়েছে।মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত এই‘‘চারুভবন’’ এচারু চন্দ্র চৌধুরীসহ অতীতের কয়েকজন চেয়ারম্যানের ছবি শোভা পেতো। দুর্বৃত্তেরা ইতিহাসের এই চিহ্নগুলো বিভিন্ন সময়ে চুরি করে নিয়ে গেছে।
আজকের শেরপুর শহরেকে ৩০/৪০ বছর আগে ‘‘সেরপুর টাউন’’ লিখা হতো। শিক্ষিত প্রবীন ব্যক্তিদের কাছে শুনা যায় দক্ষিন আফ্রিকার কেপ-টাউন, আমেরিকার জজ-টাউনের পরেই পূর্ব পাকিস্তানের ‘‘সেরপুর টাউন’’খ্যাত ছিল। আবার হরচন্দ্র চৌধুরী তার বইয়ে ‘‘সহর সেরপুর’’ লিখেছেন।এই ‘সহর সেরপুর’ বা শেরপুর শহর ৩০টি মহল্লায় বিভক্ত ছিল।বর্তমানে ২৪.৭৫ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট শেরপুর পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে ৪১ টি মহল্লায় প্রায় ১,০৪,০০০ জন লোক বসবাস করছে।
স্বাধীনতা উত্তর কালে ১৯৭৩ সনে বাংলাদেশের নতুন সংবিধানের বিধান অনুসারে প্রথম অনুষ্ঠিত শেরপুর পৌর নির্বাচনে পৌর ভোটারদের সরাসরি ভোটে প্রবীণ জননেতা ‘‘খন্দকার মজিবর রহমান’’ চেয়ারম্যান এবং ছাত্রনেতা ‘‘আমজাদ হোসেন’’ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS